শাহেদ আহমদ:
জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করেছিল। প্রায়শই জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার পিছনে ভারতীয় আধিপত্যের আশঙ্কা এবং ইসলামী আন্দোলনের স্বার্থকে সামনে আনে।
দলটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল। দলটির অনেক নেতাকর্মী সেসময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল, যারা গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মত যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধাসামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।
জামায়াত নেতারা বর্তমানে স্বাধীনতা বিষয়ে বেশ কিছু কথা বলেছেন। আমাদের দেশে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক দলটি সব সময় ৭১’ সালে তাঁদের ভূমিকার জন্য আলোচিত হয়। ৪৮ বছর ধরে এ ভাবে আলোচিত হতে থাকার কারণ অনেকাংশে জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ নামক দলটি নিজেই । ৭১’ সালে তাঁদের ভূমিকার কোন পরিপূর্ণ মূল্যায়ন তাঁরা জনগণের সামনে হাজির করতে পারেন নি। সম্ভবত দলের ভেতরেও এ বিষয়ে কোন সর্বসম্মত মূল্যায়ন নেই। জরুরি কিছু প্রশ্নের উত্তর না দিলে লোকে সন্দেহ করবেই। কোন ব্যক্তি নাম, পিতার নাম, গ্রাম, পেশা ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর না দিলে বা দ্বিধাসহ এলোমেলো উত্তর দিলে মানুষ ঐ ব্যক্তিকে সন্দেহ করবেই। মানুষের সন্দেহের জন্য ঐ ব্যক্তি নিজেই দায়ি থাকবেন। জামায়াত ইসলামি বাংলাদেশ নামক দলটিও জাতীয় জীবনের কতগুলি জরুরি প্রশ্নে হয় উত্তর দেন না অথবা একেক জামায়াত নেতা উপস্থিত মতো একেক রকম উত্তর দেন। ফলে জনমনে জামায়াত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এটা সবাই জানেন এবং মানেন যে, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু জামায়াত নেতারা এ বিষয়টি নানাভাবে এড়িয়ে যান। “১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশের সরকার প্রধান কে ছিলেন?”- ১০ জন জামায়াত নেতার মধ্যে ৬ জন এ প্রশ্নের কোন উত্তর দেন না এবং বাকি ৪ জন ১৬ রকম উত্তর দিয়ে বিষয়টিকে ঘোরালো করে ফেলেন। ফলে, জামায়াত দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় যে শুধু মাত্র জামায়াতের আমীরই এ বিষয়ে কথা বলবেন এবং জামায়াত আমীর এ বিষয়ে কোন কথা না বলে তাঁদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী অভিযোগকে আরও পোক্ত করেন।
কিছু নবীন জামায়াত নেতা আবার অতি চালাকি করে বলে যে, আমাদের জন্মই ৭১-এ হয়নি। অতএব আমরা কেমন করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজাকার হলাম? আহা, অবুঝ খোকা। বাছা, তোমার জন্ম আরও ৫০ বছর পরে হলেও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর ইয়াহিয়া খান এ দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বলার জন্য তোমাকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজাকার বলা হবে। রাজাকারের সমর্থকরাও রাজাকার, সোনামণি! তা বয়স যাই হোক। আর এত অবুঝ খোকামণিদের জনপ্রতিনিধি হবার জন্য ভোট প্রার্থী না হওয়াই ভাল। নির্বাচন কমিশন অবুঝ খোকাদের কচিকাচার দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচনের বাইরে রাখলে রাগ কর না!
আমাদের দেশের নাম কী? আমাদের প্রথম সরকার প্রধান কে ছিলেন? আমাদের দেশ কীভাবে স্বাধীন হল?- ইত্যাদি প্রশ্নে উত্তরহীন কাউকে জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এ সব প্রশ্নের উত্তরহীনদের যে কোন দেশেই স্বাধীনতাবিরোধী দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশও এ দিক থেকে ব্যতিক্রম নয়। আমাদের উল্লেখিত প্রশ্নের কোন সুনির্দিষ্ট জবাব না দেবার জন্য জামায়াতকে সকলেই ঠিকভাবে স্বাধীনতাবিরোধী বলে।