
শাহেদ আহমদ:
গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ির মূর্তিমান আতংক গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী ফখর । সে ৩ নং ফুলবড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া গ্রামের (৮ নং ওয়ার্ড) মরহুম সিদ্দেক আলীর কনিষ্ঠ পুত্র।
তিনি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেন।প্রথমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য থেকে তার রাজনীতির হাতেখড়ি। ধীরে ধীরে তার বেপরোয়া চলাফেরা এবং উগ্রতার কারনে সব সময় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী ছিলো তার দখলে। ১৯৯৬ ইং সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই তিনি ছিলেন তখনকার সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদের খুব বিশ্বস্ত এবং কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের শাসন কাল শুরু হতেই প্রথম ধাপে ফখর দুটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন একটি তার বড় ভাই আব্দুল গনি এবং অপরটি তার বোনের ছেলে নজরুল ইসলাম আক্কাসের নামে। শুরু হয় তার সরকারি কাজের টেন্ডার ভাগ বাটোয়ারা। সামান্য দিনের ভিতরে তার লাইসেন্স দুটি হয়ে উঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
স্কুল, কলেজ,রাস্তা,কালভার্ট যেখানেই কাজ পেয়েছেন নিম্ন মানের সব জিনিস পত্র দিয়েই চলতো কোন রকম লোক দেখানোর কাজ। যে এলাকায় কাজ পেয়েছেন উনি উনার ইচ্ছেমত কাজ করেছেন কেউ কোন কথা বললেই মামলা অথবা হামলার ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে নিতেন।ঠিকাদারি করা অবস্থায় চিন্তা করলেন ব্যবসা ধরে রাখতে হলে জনবল প্রয়োজন যখনই জনবলের কথা মাথায় আসলো হিসেব করে দেখলেন মানুষ রাখলে তার পারিশ্রমিক বা বেতন দিতে হবে। ভাবতে লাগলেন বিনা পারিশ্রমিকে জনবল পাবেন কোথায় হঠাৎ করে মাথায় আসলো গোলাপগঞ্জে একটা ছাত্রলীগ গ্রুপ করার তিনি চিন্তা করে দেখলেন গ্রুপ করলে বিনা পারিশ্রমিকে জনবল পাবেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ ইং সালে তৈরি করেন গোলাপগঞ্জ গোল্ডেন গ্রুপ। গোল্ডেন গ্রুপ করে তার অফিস উনার নিজ মার্কেট আহমদ খান রোডের একটি রুমে করেন। চলতে লাগলো গোলাপগঞ্জ গোল্ডেন গ্রুপ বিভিন্ন স্কুল,কলেজে গিয়ে ছাত্রদের নিজের গ্রুপে আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন।স রকার ক্ষমতায় তাছাড়া তখনকার সাংসদের আস্থাভাজন হওয়ায় স্কুল কলেজের ছাত্ররা তার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে।ধীরে ধীরে গোলাপগঞ্জে গোল্ডেন গ্রুপের প্রভাব বিস্তার হতে থাকে।
গোল্ডেন গ্রুপ শুরুর পর থেকে আকবর আলী ফখরকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয় নি তখন তিনি ঘরে বসেই শুরু করেন টেন্ডার আর চাঁদাবাজি। নেতা থাকেন ঘরে আর কর্মীরা থাকেন চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত।গোলাপগঞ্জ খাদ্য গোদাম,থানা,উপজেলা কৃষি অফিস,উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস,উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস, ঢাকাদক্ষিণ সাব রেজিস্ট্রার অফিস সহ সব দপ্তরে ছিলো তার বিচরণ।
অন্যায় অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে নিজে গড়ে তুলেন টাকার পাহাড়। চলাফেরা শুরু করেন প্রাইভেট গাড়িতে। হঠাৎ উনার কুদৃষ্টি পড়ে সুরমা নদীর বালুতে।
শুরু করেন নদী থেকে অবৈধভাবে তুলে বালু বিক্রি । নদীর পাশ্ববর্তী মানুষজন বাঘা ইউনিয়নের লাল নগর, ফুলবাড়ি হাজীপুর নওয়াপাড়ার নদীর তীরবর্তী মানুষজন বাধা দিলে নেমে আসে তাদের উপর অত্যচার। এক সময় ফখরের গোল্ডেন গ্রুপের সাথে শুরু হয় মারামারি গ্রামের নিরীহ মানুষ গোল্ডেন গ্রুপের অস্ত্রের সাথে যুদ্ধে নেমে ফিরতে হয় পঙ্গুত্ব নিয়ে।
লাল নগর গ্রামের মহিলা সহ অনেক পুরুষ হয়ে যান পঙ্গু। এক দিকে তারা পঙ্গু অন্যদিকে তারা হয়ে যান মামলার আসামী। বালু মহাল নিয়ে মারামারির ঘটনা তখনকার সময়কার বিভিন্ন অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার হয়। বালু মহাল শেষ হতে না হতেই চলে আসে পবিত্র ঈদ উল আযহা। গোলাপগঞ্জ পশুর হাট ইজারাদারের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন ইজারাদার চাঁদা দিতে না চাওয়ায় রাস্তায় গরুর গাড়ি আটকিয়ে দেন এবং উনার গোল্ডেন গ্রুপের নেতা কর্মী দিয়ে বাজারে বিশৃঙ্খলা করানোর চেষ্টা করেন। শুরু হয় বাজার কতৃপক্ষের সাথে ফখরের বন্ধুক যুদ্ধ। এক পর্যায়ে বাজার কতৃপক্ষ ও জনসাধারণের তোপের মুখে ফখর পিছু হটেন। গোলাপগঞ্জ পশুর হাটের ইজারাদার হাজী আব্দুল কাদির বাদী হয়ে ফখরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামী খোঁজতে গিয়ে ফখরের বাড়িতে হানা দেয় এবং বিপুল পরিমান অস্ত্র সহ বেশ কিছু চাঁদা বাজকে ফখরের ঘর থেকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। কিন্তু আকবর আলী ফখর প্রভাব কাটিয়ে থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আকবর আলী ফখরের অপরাধ সম্রাজ্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে বা প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার।