সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথরবোঝাই নৌকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের জ্যাকেট পরিহিত ওই ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয় জনতা। এ সময় তাঁর পকেট থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়
সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথরবোঝাই নৌকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের জ্যাকেট পরিহিত ওই ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয় জনতা। এ সময় তাঁর পকেট থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়।

নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের জ্যাকেট পরা এক ব্যক্তিকে নানা প্রশ্ন করছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁর দুই পকেট থেকে কয়েকবারে বেশ কিছু টাকা বের করেছেন তাঁরা। প্রতি নৌকায় কত টাকা করে নেওয়া হয়েছে, এমনটি জানতে চাওয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে। একপর্যায়ে প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে আনা হয়। এ সময় মানিব্যাগ থেকে র‍্যাবের পোশাক পরিহিত ওই ব্যক্তির দুটি ছবিও পাওয়া যায়।

এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি সিলেটের কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের লোভাছড়া নদীর পাড়ের। আজ শনিবার সকালে ভিডিওটি ধারণ করা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাটের লোভাছড়া কোয়ারির প্রায় ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর নিলাম দরপত্রের মাধ্যমে পিয়াস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইজারা নিয়েছে। তবে পাথর বিক্রির অনুমতি পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে কিছু অসাধু লোক নিলামে ক্রয়কৃত পাথর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করেই পাথরগুলো চুরি করা হচ্ছে। এতে নৌকাপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পান পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ছাড়া আরও একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। এতে দেখা যায়, স্থানীয় কিছু বাসিন্দা পুলিশের জ্যাকেট পরিহিত ওই ব্যক্তির কাছে তাঁর নাম জানতে চাচ্ছেন। তাঁর পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হচ্ছে। জবাবে পুলিশের জ্যাকেট পরিহিত ওই ব্যক্তি জানান, তাঁর পরিচয়পত্র সঙ্গে নেই। এ সময় স্থানীয় লোকজনকে বলতে শোনা যায়, ওই ব্যক্তি পুলিশের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করতে এসেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ বেশধারী ব্যক্তি সত্যিই পুলিশের সদস্য। তাঁর নাম নারায়ণ। তিনি কনস্টেবল হিসেবে কানাইঘাট থানায় কর্মরত আছেন। আটকের পর বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ সদস্য নারায়ণকে নিয়ে সিলেটের নিয়ে যাওয়ার জন্য গোলাপগঞ্জ আসলে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আটকায়। এরপর গোলাপগঞ্জ থানা থেকেই ওই কনস্টেবলকে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে সিলেটের কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়ালের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

পরে যোগাযোগ করা হয় সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সম্রাট তালুকদারের সঙ্গে। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি তাঁদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

পরে ওই কনস্টেবলকে কানাইঘাট থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে জানিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে সম্রাট তালুকদার বলেন, প্রাশ‌সিক কারণে ওই পুলিশ সদস্যকে সিলেট পু‌লিশলাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির চেয়ারম্যান মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, তিনিও ঘটনাটি শুনেছেন। লোভাছড়া কোয়ারির পাথর নিলামে বিক্রি করা হলেও অন্য একটি পক্ষ সেগুলো চুরি করে নিচ্ছে, এমন অভিযোগ ছিল। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত রয়েছেন, এমন অভিযোগ অনেক আগেই ছিল। লোভাছড়ায় পুলিশের একটি দল সব সময় থাকে। ভিডিওর ব্যক্তি সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন বলেও জানা গেছে।